fbpx

অ্যাডভোকেটশীপ পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নিবেন?

অ্যাডভোকেটশীপ পরীক্ষার জন্য কিভাবে পড়া শুরু করবো, যারা প্রায়ই এ প্রশ্নটি করেন এ লেখা তাদের জন্য। আজ আলোচনা করবো পরীক্ষা প্রস্তুতির পাঁচটি ধাপ নিয়ে যা অনুসরণ করলে প্রয়োজনীয় আইনগুলো সহজেই আয়ত্তে আনা সম্ভব।

ব্রেনের কার্যধারা অনুসরণে পরীক্ষা প্রস্তুতির পাঁচ ধাপ

মানুষের ব্রেন যে প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে জটিল বিষয়টিকেও নিজের আয়ত্তে নিয়ে নেয় সে প্রক্রিয়া অনুসারে অ্যাডভোকেটশীপ পরীক্ষার প্রস্তুতির পাঁচটি ধাপ আমি সাজিয়েছি। আপনি যদি একেবারেই নতুন হন তাহলে এই পাঁচটি ধাপ অনুসরণ করে নিজেকে পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত করার জন্য আপনার সময় লাগবে সর্বোচ্চ ছয় মাস। যদি আপনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে কঠোর অনুশীলন করেন তবে এক মাসের প্রস্তুতিতেও অ্যাডভোকেটশীপ এমসিকিউ পরীক্ষায় পাশ করা সম্ভব।

প্রথম ধাপ: পরিদর্শন

যখন আপনি সম্পূর্ণ নতুন কোন বিষয়ে জ্ঞান নিতে যান তখন বিষয়টি যদি হয় অতি সরল যা আপনি প্রথমবারেই বুঝে যান তাহলে আপনার ব্রেন মজা পায় ফলে আপনি আনন্দচিত্তে ‍উক্ত বিষয়ে জ্ঞান অর্জন শুরু করেন। কিন্তু উক্ত বিষয়টি যদি আইনের মত একটি জটিল বিষয় হয় যা আপনার ব্রেন সহজে বুঝে উঠতে পারে না তাহলে আপনার ব্রেন বিরক্ত হবে, আপনি হাল ছেড়ে দিয়ে উক্ত বিষয়টি সামনে এলেই নানান অজুহাতে নিজেকে গুটিয়ে নিবেন। এটা হলো মানুষে ব্রেনের স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া।

আপনি যদি ব্রেনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে মেনে নেন, তাহলে যেকোন আইনই প্রথমবার পড়তে গেলে জটিল জটিল ধারাগুলো বুঝে উঠতে আপনাকে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হবে। এক্ষেত্রে পরীক্ষা প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হলো পরিদর্শন। এপর্যায়ে আপনার কাজ হল, বাজারে প্রচলিত জনপ্রিয় যেকোন একটি গাইড বই থেকে সাতটি আইনের যেকোন একটি আইন, যেমন-দণ্ডবিধি, আপনাকে অনন্ত তিনবার পড়তে হবে, আর সবচেয়ে ভাল হল পাঁচবার পড়া। এক্ষেত্রে আপনাকে স্মরণ রাখতে হবে যে, এই তিন বার বা পাঁচবার পড়ার উদ্দেশ্য আইনটিকে বুঝে ফেলা বা সম্পূর্ণরূপে রপ্ত করে নেয়া নয়। আপনার প্রথম কাজ হলো আপনি যে আইনটি পড়ছেন সে আইনের কোথায় কী আছে তার একটা অনুমান তৈরি করা। এটাই হলো পরিদর্শন বা একনজরে দেখে নেয়া। পরিদর্শন পর্যায়ে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে যতদ্রুত সম্ভব সম্পূর্ণ আইন পড়ে শেষ করা।

পরিদর্শন পর্যায়ে যদি আপনি বেয়ার অ্যাক্ট পড়ার চেষ্টা করেন তাহলে সেটা হবে সবচেয়ে বড় বোকামী। এক্ষেত্রে আমি আবারও বলছি, বাজারে প্রচলিত যেকোন একটি জনপ্রিয় গাইড বই যেটি আপনার কাছে সহজবোধ্য মনে হবে সেরকম একটি বই থেকে আইনটি পড়তে হবে।

দ্বিতীয় ধাপ: খুঁটি গাড়া

পরিদর্শন পর্যায় শেষ হলে এবার আপনার কাজ হল সম্পূর্ণ আইনের বিভিন্ন জায়গায় খুঁটি গাড়া। খুঁটি গাড়ার অর্থ হল, যে আইনটি আপনি পড়ছেন সে আইনের দশ থেকে বিশটি ধারা চিহ্নিত করা যেগুলোকে কেন্দ্র করে আপনি পুরো আইনটি রপ্ত করবেন। যেমন, আমি দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩৪, ৫৩, ৭৬, ১০০, ১০৯, ১২০ক, ১৪১, ১৯১, ৩০০, ৩২০, ৩৩৯, ৩৫৯, ৩৭৮, ৩৯০, ৪০৬, ৪২০, ৪২৫, ৪৪১, ৪৯৯, ৫১১ ধারাকে কেন্দ্র করে পুরো দণ্ডবিধি রপ্ত করেছি। খুঁটি গাড়ার নিয়ম হলো, খুঁটি হিসেবে আপনি সেই ধারাগুলোকেই বেছে নিবেন যেগুলোকে কেন্দ্র করে আপনি পুরো আইনটিকে রপ্ত করতে পারবেন বলে আপনার মনে হয়। এছাড়া, যে ধারাগুলো থেকে বার বার প্রশ্ন আসে এবং যেগুলো আপনার কাছে সহজবোধ্য ও আনন্দনদায়ক মনে হয় সেগুলোকেই আপনি খুঁটি হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন।

তৃতীয় ধাপ: সীমানা নির্ধারণ

পরীক্ষা প্রস্তুতির তৃতীয় ধাপ হচ্ছে সীমানা নির্ধারণ। এক্ষেত্রে আপনার কাজ হচ্ছে আপনি যে ধারাগুলোকে খুঁটি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সেগুলোর আশেপাশের ধারাগুলোকে যতদূর পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে পড়া যায় সেটি নির্ধারণ করা। যেমন- দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩৪ থেকে ৩৯ ধারা পর্যন্ত একটি সীমা নির্ধারণ করা যায়। আবার একই আইনের ৩০০ ধারাকে কেন্দ্র করে ২৯৯ থেকে ৩১১ ধারা পর্যন্ত আরেকটি সীমানা নির্ধারণ করা যায়। সীমানা নির্ধারণের অর্থ হচ্ছে, যে ধারাগুলোর মধ্যে ধারাবাহিকতা আছে সেগুলোকে বার বার রিভিশন দেয়ার জন্য চিহ্নিত করা যেন সেগুলো সহজেই মনে থাকে।

চতুর্থ ধাপ: পরিচ্ছন্নতা অভিযান

এ পর্যায়ে আপনার কাজ হল, যে ধারাগুলোকে আপনি খুঁটি বানিয়েছেন এবং ধারাবাহিকভাবে পড়ার জন্য যে ধারাগুলোর মধ্যে সীমানা টেনেছেন তার বাহিরে যেসব ধারা থেকে যায় তার মধ্যে যে ধারাগুলো থেকে কখনোই প্রশ্ন আসেনি এবং যেগুলোর গুরুত্ব খুবেই কম সেগুলো চিহ্নিত করে আপনার পাঠ্য তালিকা থেকে সেগুলোকে বাদ দেয়া। এর পাশাপাশি আপনাকে আরো একটি তালিকা তৈরি করতে হবে যে তালিকায় থাকবে সেই ধারাগুলো যেগুলো পরীক্ষার জন্য বা অন্যান্য ধারাগুলো বুঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

পঞ্চম ধাপ: অনুশীলন

পরিচ্ছন্নতা অভিযান শেষে এখন আপনি পরীক্ষা প্রস্তুতীর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এখন আপনি জানেন সম্পূর্ণ আইনের কোথায় কি আছে এবং আপনাকে কোন ধারাগুলো পড়তে হবে আর কোনগুলো পড়তে হবে না। সুতরাং এখন আপনার কাজ হলো যেসব ধারায় আপনি খুঁটি গেঁড়েছেন, সেসব ধারাগুলোতে সীমানা নির্ধারণ করেছেন সেগুলোকে কেন্দ্র করে বার বার রিভিশন দেয়া এবং প্রত্যেকবার রিভিশন শেষে একটি করে মডেল টেস্ট দেয়া।

মিফতাহুর রহমান, অ্যাডভোকেট, ঢাকা জজ কোর্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from আইনের উন্মুক্ত পাঠশালা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading