fbpx

অ্যাডভোকেটশীপ পরীক্ষায় পাশ করার চারটি গুণ

অ্যাডভোকেটশীপ পরীক্ষায় পাশ করার চারটি গুণ

আজকে আমি এমন চারটি গুণ সম্পর্কে আলোচনা করবো যেগুলো অর্জন করতে পারলে অ্যাডভোকেটশীপ পরীক্ষা আপনি প্রথমবারেই পাশ করবেন। এ গুণগুলো এতটাই আন্তঃসম্পর্কিত এবং এতটাই পারস্পরিক যে, এ চারটি গুণ মিলে একটি একক গুণসত্বার জন্ম হয়। সফল আইনজীবী হতে গেলেও এ চারটি গুণ আয়ত্ত করার কোন বিকল্প নেই। এক কথায়, এই গুণগুলো যদি একবার আপনি অর্জন করতে পারেন তাহলে আপনার পাশ নিশ্চিত এবং আইনজীবী হিসেবে আপনি থাকবেন সফলতার তুঙ্গে।

Stability
স্থিতিশীলতা

স্ট্যাবিলিটি মানে নিজেকে স্থির রাখা। ধরুন, আপনি বার কাউন্সিল পরীক্ষার জন্য দণ্ডবিধি, দেওয়ানী কার্যবিধি ও সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের উপর সবচেয়ে ভালো প্রস্তুতি নিলেন আর বাকি চারটি আইনের উপর মোটামুটি প্রস্তুতি নিলেন। এখন, এমসিকিউ পরীক্ষার দিন প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েই আপনি দ্রুত এই তিনটি আইনের প্রশ্ন খোঁজা শুরু করলেন এবং কিছু প্রশ্ন পড়ে দেখলেন যে বেশিরভাগ প্রশ্নেরই উত্তর আপনি জানেন না। এ অবস্থায় আপনার হাতে দুইটি উপায়। হয় হতাশ হয়ে দিশেহারা হয়ে যাওয়া অথবা, মাথা ঠাণ্ডা রেখে হতাশা কাটিয়ে ওঠা এবং বাকি প্রশ্ন ও অন্যান্য আইনগুলোর দিকে নজর দেয়া ও যেসব প্রশ্নের উত্তর আপনি জানেন সেগুলোর উত্তর দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে আসা। অর্থাৎ, যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে স্থির রেখে ঠাণ্ডা মাথায় সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সক্ষমতাই হচ্ছে স্ট্যাবিলিটি বা স্থিতিশীলতা।

প্রতিকূল পরিস্থিতি দুই ধরণের হতে পারে

প্রথম পরিস্থিতিটা এমন যে আপনি দেখেই বুঝতে পারবেন সবকিছু আপনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে। যেমন, পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়েই আপনি বুঝতে পারলেন যে, প্রশ্নগুলো অনেক কঠিন হয়েছে। অর্থাৎ, আপনি একনজরেই বুঝে গেলে পরিস্থিতি অনেক কঠিন। এটি একটি দৃশ্যমান বিপদ

অন্যদিকে, দ্বিতীয় পরিস্থিতিটা ভিষণ জটিল। এটা এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে আপনি অনুমানই করতে পারবেন না যে পরিস্থিতি কত কঠিন। যেমন, আপনাকে এমন একটি প্রশ্নপত্র দেয়া হলো যেটা দেখে মনে হবে যে, প্রশ্নগুলো অনেক সহজ এবং প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরই আপনার জানা। কিন্তু এই সহজ প্রশ্নের আড়ালে আপনাকে যে একটি সরল ফাঁদে আটকে ফেলা হলো সেটা আপনি বুঝতেই পারলেন না। ফলে আপনি চোখ বন্ধ করে বেশিরভাগ প্রশ্নেরই ভুল উত্তর দিয়ে আসলেন। অর্থাৎ, এখানে আপনাকে টোপ দিয়ে মাছ ধরার মত একটি ফাঁদে ফেলে দেয়া হলো। এই ফাঁদকে আমি বলি ইজি ট্র্যাপ বা সরল ফাঁদ

তাহলে করণীয় কি?

প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে যদি দেখেন প্রশ্নগুলো কঠিন, এ অবস্থায় আপনার করণীয় হল মনোবল না হারিয়ে নিজেকে স্থির রাখা। মনে রাখবেন, প্রশ্নপত্রে বিশেষ করে এমসিকিউ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে পরীক্ষক এমন কিছু প্রশ্ন জুড়ে দেন, যেগুলো সত্যিকার অর্থেই কঠিন। এ ধরণের প্রশ্নগুলোকে এমনভাবে সেট করা হয় যেন প্রশ্নপত্র দেখলেই যেকোনো পরীক্ষার্থীই ভিরমি খায়। আবার কঠিন প্রশ্নগুলোর ফাঁকে আরো কিছু প্রশ্ন থাকে যেগুলোকে আপাতদৃষ্টিতে কঠিন মনে হলেও আসলে কঠিন নয়। ঠাণ্ডা মাথায় পড়লে ওগুলোর উত্তর আপনি সহজেই দিতে পারবেন। সুতরাং, এই দৃশ্যমান বিপদে আপনার কাজ হল নিজেকে স্থির রাখা এবং ঠাণ্ডা মাথায় সহজ প্রশ্নগুলো খুঁজে বের করা এবং কঠিন প্রশ্নগুলোর মধ্যে যেগুলো প্রকৃতপক্ষে কঠিন নয় সেগুলো খুঁজে বের করে সঠিকভাবে উত্তর দিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে আসা। মনে রাখবেন, কঠিন দেখে ঘাবড়ে গেলেই আপনার সর্বনাশ।

অন্যদিকে, প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে যদি দেখেন প্রশ্নগুলো অনেক সহজ, এক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য হল খুশিতে গদ গদ না হয়ে বরং আপনাকে কী সরল ফাঁদে ফেলা হচ্ছে কিনা সেটা যাচাই করা। আবারও বলছি, সরল ফাঁদ আপনাকে এমন এক আবেগে ফেলে দিবে যে, খুব সহজেই আপনি আপনার জানাশোনা প্রশ্নগুলোর বেশিরভাগ প্রশ্নেরই ভুল উত্তর দিয়ে আসবেন।

মোদ্দাকথা হল, প্রশ্নপত্র কঠিন হোক আর সহজ হোক সকল পরিস্থিতিতে নিজের আবেগকে সামলানোটাই আপনার প্রধান কাজ। আপনার কাজ হলো পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বুঝে শুনে ঠাণ্ডা মাথায় পরীক্ষা দেয়া। এটাই হলো স্ট্যাবিলিটি বা নিজেকে স্থির রাখা।

Keen Observations
সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ

বাস্তব জীবনে দেখা যায় কিছু লোক আছে যারা কোনো একটা নতুন জায়গায় গেলে পরবর্তী সময়ে ওখানে কোথায় কি ছিল, কয়জন মানুষ ছিল, কে কি করছিল, কার পরণে কি ছিল, কার আচরণ কেমন ইত্যাদি সব বিষয়ই গড়গড় করে বলে দিতে পারছেন। এটাই হচ্ছে, কিন অবজারভেশন বা সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ। অর্থাৎ, আপনি যখন কোথাও গেলেন, বা কোনো কিছু দেখলেন বা কোনো কিছু পড়লেন তখন ছোট-বড় প্রতিটি বিষয়ে মনোযোগসহ নজর দেয়ার নামই কিন অবজারভেশন বা সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ। সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণের এই গুণটি একদিনে গড়ে উঠে না, আবার এটা অর্জন করা খুব কঠিন কিছুও না। কয়েকদিন চর্চা করলেই দেখবেন আপনার মধ্যেও এই গুণটি গড়ে উঠেছে।

Analytical Capability
বিশ্লেষণী ক্ষমতা

অ্যানালিটিক্যাল ক্যাপাবিলিটি হচ্ছে এক জিনিসের সঙ্গে আরেক জিনিসের তুলনা করা, একটির সঙ্গে আরেকটির পার্থক্য করা, একই জাতীয় বিভিন্ন জিনিসকে আলাদা আলাদাভাবে চিহ্নিত করা, একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে আরেকটি ঘটনা বুঝে যাওয়া, জটিল পরিস্থিতিতে সমস্যা চিহ্নিত করে যথাযথ সমাধান করা ইত্যাদি সক্ষমতা। সাধারণত অ্যানালিটিক্যাল ক্যাপাবিলিটি নির্ভর করে সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণের উপর। যেমন, দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪৪ ধারায় দেয়া আছে আহতের সংজ্ঞা এবং একই আইনের ৩১৯ ধারায় দেয়া আছে আঘাতের সংজ্ঞা। এখন, আহত এবং আঘাত এই দুইটি শব্দের পার্থক্য এবং সামঞ্জস্য খুঁজে বেরা করা হল অ্যানালিটিক্যাল ক্যাপাবিলিটি বা বিশ্লেষণী ক্ষমতা। যদি আপনি ‘আহত’ এবং ‘আঘাত’ এই শব্দ দুটির পার্থক্য বুঝতে না পারেন তাহলে বুঝা গেল আপনার মধ্যে অ্যানালিটিক্যাল ক্যাপাবিলিটি বা বিশ্লেষণী ক্ষমতা নেই।


বিশ্লেষণী ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়

আগেই বলেছি, সাধারণত বিশ্লেষণী ক্ষমতা নির্ভর করে সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণের উপর। অতএব, যেকোনো ধারা পড়ার সময় আপনাকে প্রতিটি শব্দের দিকে নজর দিতে হবে, একটি শব্দের সঙ্গে আরেকটি শব্দের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম পার্থক্যগুলো বুঝতে হবে, একটি ধারার সঙ্গে অন্য ধারা তুলনা করে পড়তে হবে, একটি ধারার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক অন্যান্য ধারাগুলো পড়তে হবে, যে ধারাগুলো পড়বেন তার প্রতিটি ধারার মার্জিনাল নোট, সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা, শর্ত, ব্যতিক্রম ও উদাহরণগুলো তুলনা করে পড়তে হবে। এভাবে অধ্যয়ন করলে আপনার মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই বিশ্লেষণী ক্ষমতা তৈরি হয়ে যাবে।

এছাড়াও, নিজের মধ্যে বিশ্লেষনী ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আপনাকে বিগত পরীক্ষাগুলোর অ্যানালিটিক্যাল বা ক্রিটিকাল প্রশ্নগুলো বারবার পড়তে হবে এবং নিজে নিজে এগুলোর সমাধান করতে হবে। একই সঙ্গে আপনার নিজেকেও কিছু ক্রিটিক্যাল প্রশ্ন তৈরি করতে হবে। এভাবে অনুশীলন করলে নিশ্চিতভাবেই আপনার মধ্যে গড়ে উঠবে এক অনবদ্য অ্যালিটিক্যাল পারসনালিটি।

Quick-wittedness
তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা

কোনো কিছু দ্রুত বুঝে উঠার ক্ষমতা হচ্ছে কুইক-ইউটেডনেস বা তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা। পরীক্ষার হলে আপনি এমন কিছু প্রশ্ন পাবেন যেগুলো দেখলে মনে হবে ওগুলোর উত্তর সম্ভবত প্রশ্নকর্তা নিজেও দিতে পারবেন না। অথচ, পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়ার পরেই আপনি বুঝতের পারলেন এগুলো সবকটির উত্তরই আপনার জানা আছে। আপনি পরীক্ষার হলে বুঝেননি, অথচ হল থেকে বের হয়েই বুঝে গেছেন এটা হলো কুইক-ইউটেডনেস বা তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তার অভাব। যদি আপনি ওই প্রশ্নগুলো পরীক্ষার হলেই বুঝে যান, তাহলে সেটাই হলো কুইক-ইউটেডনেস বা তাৎক্ষণিক বুঝে যাবার ক্ষমতা।

মনে রাখবেন, কুইক উইটেডনেসের সঙ্গে তাড়াহুড়োর কোনোই সম্পর্ক নেই, বরং এটি তাড়াহুড়োর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যদি আপনি তাড়াহুড়ো করেন, যদি আপনি স্থির না থাকেন তাহলে আপনার মাথায় প্রশ্নটি সেট হবার সময়ই পাবে না। মাথায় প্রশ্নটি সেট না হলে আপনি সেটি বুঝতে পারবেন না।

একটি ক্রিটিক্যাল প্রশ্ন তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে হলে অবশ্যই আপনাকে ঠাণ্ডা মাথায় সেটিকে কয়েকবার পড়তে হবে, প্রতিটি শব্দের প্রতি সূক্ষ্মভাবে নজর দিতে হবে এবং প্রতিটি শব্দকে বিশ্লেষণ করে পড়তে হবে। এক কথায় আপনার Quick Wittedness নির্ভর করে আপনার Stability, Keen Observations ও Analytical Capabilities এর উপর।

মিফতাহুর রহমান, অ্যাডভোকেট, ঢাকা জজ কোর্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Discover more from আইনের উন্মুক্ত পাঠশালা

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading